লালন ফকির
ভূমিকা:: উনিশ শতকের বাংলায় সর্বধর্মসমন্বয়ের ক্ষেত্রে যাঁরা গুরুত্বপূর্ন অবদান রেখেছিলেন লালন ফকির বা লালন সাঁই হলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম আধ্যাত্মিক বাউলসাধক । তিনি বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ও বাংলাদেশের বাউলগানের শ্রেষ্ঠতম রচয়িতা ছিলেন । তিনি সাধারণ মানুষের কাছে লালন ফকির, লালন সাঁই, লালন শাহ ইত্যাদি নামে পরিচিত ছিলেন । লালন ফকিরের প্রথম জীবনের বেশ কিছু বিষয়ের সঠিক তথ্য জানা যায় না । সম্ভবত তিনি ১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দে যশোহর জেলার ঝিনাইদহ মহকুমার হরিশপুর গ্রামে বা কুষ্ঠিয়া জেলার কুমারখালি থানার ভাড়ারা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন । একটি মতানুসারে লালন ফকির সম্ভ্রান্ত হিন্দু কায়স্থ পরিবারের সন্তান ছিলেন । অন্য মতানুসারে লালন ফকির ছিলেন মুসলমান তন্তুবায় পরিবারের সন্তান । সমাজ ও সংসার সম্পর্কে বীতশ্রদ্ধ হয়ে লালন বৈরাগ্য গ্রহণ করে সিরাজ সাঁই নামে বাউল গুরুর কাছে দীক্ষা নেন ও বাউল সাধনায় মনোনিবেশ করেন । অসামান্য প্রতিভার গুণে তিনি অল্পদিনেই বাউল গীতিকে অত্যন্ত জনপ্রিয় করে তোলেন ।
লালন ফকির ছিলেন একজন মানবতাবাদী সাধক, যিনি ধর্ম, বর্ণ, গোত্রসহ সকল প্রকার জাতিগত বিভেদ থেকে সরে এসে মানবতাকে সর্বোচ্চ স্থান দিয়েছিলেন । তিনি নিরাকার পরমেশ্বরে বিশ্বাস করতেন । তিনি তাঁর বাউল গানের মধ্যে দিয়ে জাতিভেদের উর্ধ্বে উঠে মানবধর্মের জয়গান গেয়েছেন । তাঁর বাউল গানের মধ্যে যেমন ইসলামি চিন্তার প্রভাব আছে তেমন বৈষ্ণব ভাবনাও আছে । আল্লা-মহম্মদ-কৃষ্ণ-গৌর সবাইকে নিয়ে তিনি উদারভাবে গানে বেঁধেছেন । লালন লেখেন— "সব লোকে কয় লালন কী জাত সংসারে / লালন বলে জাতের কি রূপ দেখলাম না এই নজরে ।" ১৮৯০ সালের ১৭ই অক্টোবর লালন ফকির ১১৬ বছর বয়সে কুষ্টিয়ার কুমারখালির ছেউড়িয়াতে নিজ আখড়ায় মৃত্যুবরণ করেন।।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন